ইন্দোনেশিয়ায় বিনামূল্যের স্কুল খাবার খেয়ে এ সপ্তাহে এক হাজারেরও বেশি শিশু অসুস্থ হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত পশ্চিম জাভার চিপংকর এলাকায় ১ হাজার ৭৪ জন শিক্ষার্থী খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়।
এর আগে গত সপ্তাহে পশ্চিম জাভা ও সেন্ট্রাল সুলাওয়েসি প্রদেশে আরও প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী একই সমস্যায় ভুগেছিল। ঘটনাগুলো প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্টোর বহু বিলিয়ন ডলারের পুষ্টিকর খাবার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি করেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই কর্মসূচির আওতায় ৮ কোটি শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে দুপুরের খাবার সরবরাহ করার লক্ষ্য রয়েছে। তবে ধারাবাহিক খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে বেসরকারি সংস্থাগুলো এ কর্মসূচি স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা পেটব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাবের পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের মতো অস্বাভাবিক উপসর্গের অভিযোগ করেছে। গত সপ্তাহে চিপংকর এলাকার একটি ঘটনায় স্থানীয় পুষ্টি সরবরাহ ইউনিটের কারিগরি ত্রুটিকে দায়ী করেছে জাতীয় পুষ্টি সংস্থা (BGN)। ওই এলাকার কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
চিপংকরেই এ সপ্তাহের প্রথম ঘটনাটি ঘটে। সোমবার ৪৭৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয় এবং বুধবার আরও প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়। জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে অন্তত ৪ হাজার ৭১১। তবে শিক্ষা পর্যবেক্ষণ সংস্থা JPPI জানিয়েছে, এ সংখ্যা ৬ হাজার ৪৫২-তে পৌঁছেছে।
JPPI-এর জাতীয় সমন্বয়ক উবায়েদ মাত্রাজি বলেন, “এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সরকারকে এটিকে মহামারি ঘোষণা করে কর্মসূচি স্থগিত করে পর্যালোচনা চালানো উচিত।”
প্রস্তাব এসেছে, তহবিল সরাসরি অভিভাবকদের হাতে দিলে তারা নিজ উদ্যোগে সন্তানদের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবেন। তবে জাতীয় পুষ্টি সংস্থা এ প্রস্তাব নাকচ করেছে।
প্রাবোয়ো এই কর্মসূচিকে তার নেতৃত্বের প্রধান প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল শিশুদের পুষ্টিহীনতা কমানো। কিন্তু একের পর এক খাদ্যে বিষক্রিয়ার ঘটনায় তা এখন বিতর্কের মুখে।
এ বছরই এই কর্মসূচির জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। তুলনায়, ভারত বছরে ১.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১২ কোটি শিশুকে খাবার দেয় এবং ব্রাজিল প্রায় একই বাজেটে ৪ কোটি শিক্ষার্থীকে সেবা দেয়।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এত বড় বাজেট দুর্নীতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। ইন্দোনেশিয়ার অডিট বোর্ডের গবেষক মুহাম্মদ রাফি বাকরি বলেন, “এই কর্মসূচি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের জন্য সোনার খনি হয়ে উঠতে পারে।”