ফিলিপাইনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে রাজধানী ম্যানিলায় রাস্তায় নেমেছে হাজারো মানুষ। ভুয়া অবকাঠামো প্রকল্প বা তথাকথিত “ঘোস্ট প্রজেক্ট” কেলেঙ্কারিতে করদাতাদের বিলিয়ন ডলার ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে।
রোববার সকালে ম্যানিলার লুনেটা পার্কে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়। অনেকের হাতে ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড।
২৩ বছর বয়সী নার্সিং শিক্ষার্থী আলি ভিলাহেরমোসা বলেন, “আমি নিজে বারবার পানিতে হেঁটে গেছি। যদি ভুয়া প্রকল্পের জন্য বাজেট থাকে, তবে স্বাস্থ্য খাতের জন্য কেন বাজেট নেই? এই অর্থ আত্মসাৎ লজ্জাজনক।”
বামপন্থি সংগঠন বাগং আলিয়ানসাং মাকাবায়ানের চেয়ারম্যান টেডি ক্যাসিনো জানান, তারা শুধু লুট হওয়া অর্থ ফেরত চান না, জড়িতদের কারাদণ্ডও দাবি করছেন। তাঁর ভাষায়, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনতার ক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় নামা ছাড়া উপায় নেই। এতে সরকারের ওপর চাপ তৈরি হবে।”
প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মারকোস জুনিয়র সোমবার এক বক্তব্যে বলেন, জনগণের প্রতিবাদে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। তবে তিনি শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখার আহ্বান জানান। এদিকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সেনাবাহিনীকে রেড অ্যালার্টে রাখা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা দুপুরে ঐতিহাসিক এডিএসএ সড়কে মিছিল করার পরিকল্পনা করছে। এখানেই ১৯৮৬ সালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট মারকোসের স্বৈরশাসক পিতা।
দুর্নীতির এই কেলেঙ্কারির জেরে কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে। তদন্ত শুরু হওয়ার পর প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মার্টিন রোমুয়ালদেজ, যিনি প্রেসিডেন্ট মারকোসের চাচাতো ভাই, পদত্যাগ করেছেন।
একটি নির্মাণ কোম্পানির মালিকরা অভিযোগ করেছেন, প্রায় ৩০ জন সংসদ সদস্য ও জনপথ ও মহাসড়ক বিভাগের (ডিপিডব্লিউএইচ) কর্মকর্তারা নগদ ঘুষ নিয়েছেন।
ফিলিপাইনের অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমান করেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দুর্নীতির কারণে দেশটির অর্থনীতিতে ক্ষতি হয়েছে ১১৮.৫ বিলিয়ন পেসো, যা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার। পরিবেশ সংগঠন গ্রিনপিসের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ আসলে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার।
ম্যানিলার উত্তরে বুলাকান প্রদেশে, যেখানে একাধিক ভুয়া প্রকল্প শনাক্ত হয়েছে, সেখানকার বাসিন্দারা এখনও হাঁটুসমান পানিতে চলাফেরা করছেন।
৮১ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত এলিজাবেথ আবানিলা বলেন, “রাজনীতিবিদ আর ঠিকাদার—দুজনেই দোষী। কাজ শেষ হওয়ার আগেই অর্থ হাতবদল করা উচিত হয়নি।”
ফিলিপাইনে সরকারি অর্থ নিয়ে দুর্নীতির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। অভিযোগ আছে, উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদরা দোষী প্রমাণিত হলেও সাধারণত বড় কোনো শাস্তি এড়িয়ে যান।