আফগানিস্তানে প্রায় আট মাস তালেবান কর্তৃপক্ষের হাতে আটক থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন ব্রিটিশ দম্পতি পিটার রেনল্ডস (৮০) ও তাঁর স্ত্রী বার্বি রেনল্ডস (৭৬)। শনিবার তারা দোহা থেকে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান।
শুক্রবার মুক্তির পর দোহায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তারা ব্রিটেনে ফেরেন। বিমানবন্দরে পৌঁছালে কন্যা ও আফগানিস্তানে যুক্তরাজ্যের বিশেষ প্রতিনিধি রিচার্ড লিন্ডসে তাদের স্বাগত জানান।
পিটার রেনল্ডস ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম হয়তো আর মুক্তি পাব না, এমনকি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগ পর্যন্ত আটকে রাখা হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা বিভ্রান্ত কেন এমন হলো, তবে স্বস্তি যে অবশেষে মুক্তি মিলেছে।”
বার্বি রেনল্ডস জানান, সবচেয়ে কষ্টের ছিল তাঁর ৮০ বছর বয়সী স্বামীকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পুলিশি গাড়িতে তুলতে দেখা।
পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এটি কূটনীতি, সহানুভূতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার শক্তি আবারও স্মরণ করিয়ে দিল। যদিও বাবা-মায়ের সুস্থ হতে সময় লাগবে, আজ আমাদের জন্য বিশাল আনন্দের দিন।”
গত ফেব্রুয়ারিতে বামিয়ান প্রদেশে বাড়ি ফেরার পথে দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে তাদের উচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে, পরে দিনের আলোহীন ভূগর্ভস্থ সেলে রাখা হয়। পরবর্তীতে কাবুলে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এ পরিস্থিতি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।
দম্পতি ১৯৭০ সালে কাবুলে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং প্রায় দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে বসবাস করেছেন। তারা শিক্ষা কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং আফগান নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছিলেন।
বার্বি রেনল্ডস মুক্তির পর কাবুল বিমানবন্দরে বলেন, “আমরা ভালোভাবে আচরণ পেয়েছি। সুযোগ হলে আবার আফগানিস্তানে ফিরতে চাই। আমরা আফগান নাগরিক।” তাঁদের ছেলে জনাথনও জানান, বাবা-মা দেশটিতে ফিরতে আগ্রহী।
তালেবান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল কাহার বালখি জানান, দম্পতি আফগানিস্তানের আইন ভঙ্গ করেছিলেন। বিচারিক প্রক্রিয়ার পর তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই মুক্তির খবরকে পরিবারের জন্য স্বস্তিদায়ক বলে মন্তব্য করেছেন। ব্রিটিশ সরকার আফগানিস্তানে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়ে বলেছে, দেশটিতে কনস্যুলার সহায়তা দেওয়ার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত।
২০২১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীর প্রত্যাহারের পর ক্ষমতায় ফেরা তালেবান এখনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। এখন পর্যন্ত শুধু রাশিয়াই তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। এ সময়ে বিদেশি নাগরিকদের একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।