নিউইয়র্কে আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন। বিশ্বের প্রায় ১৫০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ছয় দিনের এ অধিবেশনে অংশ নেবেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি এবং ইরানের পারমাণবিক সংকট।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “আমরা অশান্ত ও অজানা স্রোতে একত্রিত হচ্ছি। ভূরাজনৈতিক বিভাজন বেড়েই চলেছে, সংঘাত বাড়ছে, দায়মুক্তির সংস্কৃতি বিস্তৃত হচ্ছে এবং জলবায়ু সংকটে বিশ্ব উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও চাপে রয়েছে।”
ট্রাম্প মঙ্গলবার সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন। দ্বিতীয় দফা মেয়াদের আট মাস পার করা এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন কমানোর পক্ষে এবং মানবাধিকার পরিষদ, ইউনেস্কো ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকেও সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের ভাষণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তিনি নিজের কৃতিত্ব তুলে ধরবেন এবং আবারও নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবিতে ইঙ্গিত করতে পারেন। গুতেরেস ও ট্রাম্পের বৈঠকও নির্ধারিত রয়েছে, যা জানুয়ারি থেকে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। মহাসচিব এটিকে “কূটনীতির বিশ্বকাপ” বলে উল্লেখ করেছেন।
গাজা ইস্যু এবার আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ প্রায় দুই বছর ধরে চলমান, ফলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে দুর্ভিক্ষের সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখবেন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ভিসা না পাওয়ায় সরাসরি অংশ নিতে পারবেন না, তবে ভিডিও বার্তা দেবেন।
এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধও আলোচনার অন্যতম বিষয় হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বক্তব্য রাখবেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাধারণত এই অধিবেশনে যোগ দেন না।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তা পরিষদ গাজা ও ইউক্রেন ইস্যুতে পৃথক বৈঠক ডাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একইসঙ্গে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে জরুরি আলোচনা হতে পারে। সেপ্টেম্বরে ইরানের ওপর জাতিসংঘের সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি নিউইয়র্কে উপস্থিত থাকবেন।
জাতিসংঘের এ অধিবেশনকে ঘিরে কূটনৈতিক অঙ্গনে জটিল ও বহুমুখী চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে, যা আগামী সপ্তাহে বিশ্ব রাজনীতির গতিপথে প্রভাব ফেলতে পারে।