ঢাকা, ২৬ মে, ২০২৫ (ডেপ্রবা) : রবিবার, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে রাশিয়া সর্ববৃহৎ এলাকা জুড়ে বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। এ হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে, এবং অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কিয়েভের নিকটবর্তী মারিভকার গ্রামের আবাসিক এলাকা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, যেখানে একের পর এক মিসাইল ও ড্রোন আঘাত হানে। জরুরি উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে লোকজনকে উদ্ধারে কাজ করে চলেছে, একাধিক স্থানে আগুন নেভানোর কাজ চলছিল, যখন নতুন বিস্ফোরণের শব্দে এলাকা কেঁপে ওঠে।
এক নারী বাসিন্দা জানান, “আমরা বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। আমি আমার ২০ মাসের শিশুকে কম্বলে জড়িয়ে আড়াল করি। মুহূর্ত পর আরও একটি ভয়ানক বিস্ফোরণ হয়। চারদিক আলোয় ভরে যায়, ঘরবাড়ি সব উল্টে যায়।”
ওডেসার দৃশ্যে দেখা যায়, ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া বাড়ি ও গাড়ির মাঝখানে দমকল কর্মীরা আগুন নিভানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে, কিয়েভের বাসিন্দারা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন, যেখানে তারা কম্বল ও স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন।
অবশ্য একই দিনে কিছু মানবিক অগ্রগতিও দেখা গেছে। রবিবার রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে দুই পক্ষই ৩০৩ জন বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বন্দি থাকা ইউক্রেনীয় সৈনিকেরা মুক্তি পেয়ে তিন বছর পর প্রথমবারের মতো চকোলেট খাচ্ছেন।
এর আগে শনিবার উভয় পক্ষ ৩০৭ জন করে বন্দি বিনিময় করে, এবং শুক্রবার আরও ২৭০ সৈনিক ও ১২০ জন বেসামরিক নাগরিক মুক্তি পেয়েছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশেষজ্ঞ ও ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনটন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক স্কট লুকাস বলেন, “ক্রেমলিন, ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বে, ইউক্রেনের প্রতিরোধের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে। গত দুই দিনে রাশিয়া ৫৫০টির বেশি ড্রোন ও ৮৩টি মিসাইল নিক্ষেপ করেছে, যার বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও রাশিয়ার স্থলসেনা কিছু অঞ্চল দখল করতে পেরেছে, তবে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। এখন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ক্রেমলিনকে যুদ্ধ শেষ করতে আলোচনায় আসতে হচ্ছে।”
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ৪০তম মাসে গড়িয়েছে এবং এর মধ্যেই এই ধরনের বড় আকারের হামলা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ বন্ধ না হলে এর পরিণতি হবে আরও ভয়াবহ।