নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। বিক্ষোভে অন্তত ৭২ জন নিহত হওয়ার পর রবিবার তিনি দায়িত্ব নেন এবং দুর্নীতি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেন।
৭৩ বছর বয়সী এই নেতা বলেন, তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে জেনারেশন জেডের চিন্তাধারার সঙ্গে মিল রেখেই সরকারকে কাজ করতে হবে। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে দুর্নীতি বন্ধ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক সমতা আনার প্রতিশ্রুতি।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নেপালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রতি পাঁচজনের একজন বেকার। মাথাপিছু আয় মাত্র ১ হাজার ৪৪৭ ডলার। এই বাস্তবতায় তরুণরা পরিবর্তনের দাবিতে সোচ্চার হন।
গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধকরণের প্রতিবাদে শুরু হওয়া আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রাজধানী কাঠমান্ডুর সরকারি ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ হয়। দুই দিনের সহিংসতায় ১৯১ জন আহত হন। এটি ২০০৮ সালে গৃহযুদ্ধ ও রাজতন্ত্র বিলুপ্তির পর সবচেয়ে বড় অস্থিরতা বলে মনে করা হচ্ছে।
কার্কি জানান, “আমার নাম এসেছে রাস্তায় আন্দোলন থেকে। আমি এই অবস্থানে আসতে চাইনি। ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব নেব এবং নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।” নির্বাচন আগামী ৫ মার্চ ২০২৬ তারিখে নির্ধারিত হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ডিসকোর্ডে আলোচনার মাধ্যমে কার্কিকে তাদের নেতা হিসেবে মনোনীত করে। সেনাপ্রধান জেনারেল আশোক রাজ সিগদেল ও প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌডেল আলোচনার মাধ্যমে তাঁর নাম চূড়ান্ত করেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সাধারণ মানুষ পরিবর্তনের প্রত্যাশা করলেও চ্যালেঞ্জগুলোকে কঠিন বলে মনে করছেন। কাঠমান্ডুর বাইরে ফারপিং গ্রামের মুদি দোকানদার ৬৯ বছরের সত্য নারায়ণ বলেন, “এই সরকারের দায়িত্ব অনেক। সব শ্রেণিকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্য ও শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
বিক্ষোভের সময় প্রায় ১২ হাজার ৫০০ বন্দি পালিয়ে যায়, যা নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। সেনারা এখন ধীরে ধীরে রাস্তাঘাট থেকে সরে দাঁড়ালেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
অঞ্চলীয় শক্তিগুলো নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেপালের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। চীনও নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামা সুশীলা কার্কিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশটির জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সফলতা কামনা করেছেন।
সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ছয় মাসে সুশাসন ও দুর্নীতি দমনে কতটা সফল হয় তা নিয়েই এখন নেপালের রাজনীতি ও সমাজের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে।