ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস নেতাদের সরিয়ে দিলে গাজার যুদ্ধের অবসান ঘটবে। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, কাতারে অবস্থানরত হামাস নেতারা গাজার মানুষের প্রতি কোনো গুরুত্ব দেন না এবং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতেই বারবার যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ব্যাহত করেছেন।
নেতানিয়াহুর বক্তব্য আসে এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক মার্কো রুবিও ইসরায়েল সফরের আগে সাংবাদিকদের বলেন, কাতারে হামাসের ওপর ইসরায়েলের হামলায় ওয়াশিংটনের অসন্তোষ থাকলেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট হবে না। রুবিও বলেন, “এটি সম্পর্কের প্রকৃতিকে বদলাবে না, তবে এর কূটনৈতিক প্রভাব নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে।”
ইসরায়েল সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজা সিটিতে অভিযান জোরদার করেছে। বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে আগস্টের শেষ নাগাদ প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ ওই এলাকায় অবস্থান করছিলেন। সংস্থাটি বলছে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে সেখানে দুর্ভিক্ষ তৈরি হয়েছে।
এদিকে গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন। তবে গাজায় সাংবাদিক প্রবেশ ও তথ্য সংগ্রহে সীমাবদ্ধতার কারণে এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
আন্তর্জাতিক মহলে যুদ্ধবিরতির আহ্বান বাড়ছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সম্প্রতি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি গাজায় অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ইসরায়েলের পাশে রয়েছে এবং হামাসকে আর কখনও গাজার শাসন ক্ষমতায় ফেরত আসতে দেওয়া হবে না।
দেশের ভেতরেও নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। বন্দিদের পরিবারভিত্তিক সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে, প্রধানমন্ত্রীর জেদই যুদ্ধবিরতির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ২৫১ জনকে আটক করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে এখনও ৪৭ জন গাজায় রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাদের মধ্যে ২৫ জন ইতিমধ্যেই নিহত বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে।
যুদ্ধটি শুরু হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আকস্মিক হামলার মাধ্যমে, যেখানে ১,২০০ জনের বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছিলেন। পাল্টা অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৬৪ হাজার ৮০৩ জন নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যুদ্ধবিরতির পথে বড় বাধা তৈরি করছে। মার্কো রুবিও রবিবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে জেরুজালেমে বৈঠক করবেন এবং পশ্চিম প্রাচীরও পরিদর্শন করবেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।