পোল্যান্ড অভিযোগ করেছে যে তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে রাশিয়ার ড্রোন প্রবেশ করেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকেছে দেশটি। বৃহস্পতিবার পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ আলোচনায় বসবে।
পোল্যান্ডের দাবি, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে এক নজিরবিহীন হামলা। তবে রাশিয়া অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, এসব ড্রোন তাদের নয়।
ড্রোন লঙ্ঘন ও ক্ষয়ক্ষতি
পোলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোট ১৯ বার ড্রোন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এসব হামলায় একজনও নিহত হয়নি, তবে একটি বাড়ি ও একটি গাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এ ঘটনার পর পোল্যান্ড সীমান্তবর্তী আকাশপথে বেসামরিক বিমান চলাচল তিন কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা চলবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
নিরাপত্তা জোরদার ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
পোল্যান্ড ইতোমধ্যেই বেলারুশ সীমান্তে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। কারণ ১২ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেলারুশ ও রাশিয়া যৌথ সামরিক মহড়া পরিচালনা করছে। সীমান্তের কিছু প্রবেশপথ শুক্রবার থেকে বন্ধ থাকবে।
বুধবার সংসদে বক্তব্যে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ড্রোন হামলা পরিস্থিতিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সংঘাতের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি ন্যাটোর আর্টিকেল ৪ অনুযায়ী বৈঠক ডাকেন। এই ধারায় কোনো সদস্য দেশের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা বা নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে জরুরি বৈঠক আহ্বান করা যায়।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, রাশিয়ার এই আচরণ বেপরোয়া এবং ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া কার্যকর ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউক্রেনও এ ঘটনাকে ন্যাটোর সক্ষমতা যাচাইয়ের চেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট কারোল নাভরকি বলেন, ঘটনাটি ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া পরীক্ষার প্রচেষ্টা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে আলাপ করে মিত্রদের ঐক্য নিশ্চিত করেছেন বলে জানান।
অন্যদিকে চীন জানিয়েছে, তারা আশা করে রাশিয়া ও পোল্যান্ড সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, সব পক্ষের উচিত আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো।
পটভূমি
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে একাধিকবার রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে। তবে কখনোই ন্যাটো দেশগুলো সেগুলোকে গুলি করে নামায়নি। ইউক্রেনের বড় মিত্র পোল্যান্ড বর্তমানে দেশটিতে এক মিলিয়নের বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে এবং মানবিক ও সামরিক সহায়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।