Wednesday, September 10, 2025
Homeআন্তর্জাতিকবিক্ষোভে অস্থির নেপাল, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

বিক্ষোভে অস্থির নেপাল, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে উত্তাল কাঠমান্ডু, নিহত ২২

নেপালে দুর্নীতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ এবং অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিবাদে চলমান সহিংস বিক্ষোভে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। শত শত মানুষ আহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি।

সোমবার শুরু হওয়া এ বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তরুণ প্রজন্ম। বয়স ১৩ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে থাকা তরুণ-তরুণীরা দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি, টিয়ার গ্যাস ও পানি কামান ব্যবহার করেছে। কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণাপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, দেশের “অসাধারণ পরিস্থিতি”র কারণে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। একই দিন রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেল শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব দেন।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় আবারও নেমে আসেন বিক্ষোভকারীরা। তারা পুলিশের একটি বুথ ও নেপালি কংগ্রেস কার্যালয়ের সামনে আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেন। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায় সহিংসতার কারণে।

কাঠমান্ডুর দক্ষিণে চন্দ্রপুরে বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভেঙে জড়ো হলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সেখানে একটি পুলিশ গাড়িতে আগুন ধরানো হয়।

গত সপ্তাহে ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও এক্সসহ ২৬টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয় সরকার। ভুয়া তথ্য ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে দাবি করে তারা। কিন্তু তরুণরা এটিকে মতপ্রকাশ দমনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এই আন্দোলন শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়, দীর্ঘদিনের দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে নেপালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের বেকারত্বের হার ছিল ২০ দশমিক ৮ শতাংশ।

আন্দোলনে “নেপো কিডস” বা রাজনীতিকদের সন্তানদের বিলাসী জীবনযাপনের বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। সাধারণ মানুষের কষ্টের বিপরীতে নেতাদের পরিবারের আড়ম্বরপূর্ণ জীবন তরুণদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও ও পোস্টে এসব বৈষম্য তুলে ধরা হয়েছে।

“এই আন্দোলন দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক নতুন প্রজন্মের আহ্বান” বলে মন্তব্য করেছেন সমাজবিজ্ঞানী দীপেশ ঘিমিরে। তার মতে, এ প্রতিবাদ দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, “ফাইনাল রেভোলিউশন” নামে পরিচিত এই আন্দোলন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী অলি পদত্যাগ করলেও তরুণদের আন্দোলন থেমে নেই। তারা দুর্নীতিমুক্ত নেপাল ও স্বাধীন মতপ্রকাশ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাস্তায় থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

  • বিষয়াদি সম্পর্কে আরও পড়ুন:
  • নেপাল

RELATED NEWS

Latest News