গাজার অসহায় জনগণের উপর ইসরায়েলি হামলায় সোমবার নতুন করে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৪ জন। এদের মধ্যে ১১ জন সহায়তা বিতরণকেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার দাবি করেছিলেন, ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক বিরতি ‘জয়ের’ মাধ্যমে কিছু নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হতে পারে গাজায় বন্দী থাকা জিম্মিদের মুক্তির পথ। তার এই মন্তব্যের পর নতুন করে অস্ত্রবিরতির আশার সঞ্চার হয়েছে।
মধ্যস্থতাকারী কাতার জানিয়েছে, ইরান-ইসরায়েল বিরতি এই আলোচনায় ইতিবাচক গতি এনে দিয়েছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, “আমরা আশা করছি না যে এটা আজ-কালই হবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো এখন বিদ্যমান রয়েছে।”
এদিকে সোমবার সকাল থেকেই গাজা জুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও গোলাগুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৪ জন। গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসসাল জানান, মধ্য ও দক্ষিণ গাজার বিভিন্ন সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রে ১১ জন নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় সাতটি পৃথক স্থানে হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ২৩ জন।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সহায়তা বিতরণস্থলে হামলার ঘটনা বেড়েছে। মধ্য গাজার বাসিন্দা সামির আবু জারবু বলেন, “আমি ও আমার চার ভাই রাতের বেলায় খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করেই সেনারা গুলি চালাতে শুরু করে এবং ড্রোন থেকে গুলি বর্ষণ করে। আমরা প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দেই, কিছুই নিতে পারিনি।”
তিনি আরও বলেন, “অবস্থা ভয়াবহ। আমরা চরম ক্ষুধার মধ্যে আছি। আমার সাত ভাইবোনের জন্য এক বস্তা আটা জোগাড় করাটাই এখন একমাত্র লক্ষ্য।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ বিষয়ে এএফপি’র কাছে জানায়, তারা বিস্তারিত না পেয়ে মন্তব্য করতে পারছে না।
এদিকে গাজা শহর ও আশপাশের এলাকায় নতুন করে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। আরবি ভাষায় দেওয়া এক বিবৃতিতে মুখপাত্র অবিচাই আদ্রেই বলেন, “আপনার নিরাপত্তার জন্য পশ্চিম ও দক্ষিণে আল-মাওয়াসির দিকে সরে যান।”
তবে আল-মাওয়াসিকেও বারবার ইসরায়েলি হামলা লক্ষ্য করা গেছে, যদিও অঞ্চলটিকে নিরাপদ ঘোষণা করা হয়েছিল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৬ হাজার ৫৩১ জন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘ এ তথ্যকে বিশ্বাসযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে।