২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রিক ধারার বাইরে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ ও সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আটটি মূল বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। এ বাজেট দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে।
অর্থপদেষ্টা জানিয়েছেন, এবারের বাজেটে দেশীয় শিল্পের বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে কর প্রশাসন সহজ করা, কর অব্যাহতির সংস্কৃতি সীমিত করা এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে নীতিগতভাবে পৃথক করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্য অর্জন, কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি এবং ভ্যাট ব্যবস্থাকে সহজ করার লক্ষ্যে আইএমএফ-এর শর্ত মেনে নতুন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে রাজস্ব আদায়ের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কমপ্লায়েন্স গ্যাপ হ্রাসের উপরও জোর দেয়া হয়েছে।
অর্থপদেষ্টা জানান, এবার বাজেটের আকার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই বরং ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। ঐতিহ্যগত অবকাঠামো ভিত্তিক বাজেটের পরিবর্তে মানুষের জীবনমানের উন্নয়নকে সামনে রেখে বাজেট রূপায়ণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “এই বাজেট ব্যতিক্রমধর্মী। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি ছোট আকারের বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে যাতে মানুষের উপর প্রভাব ফেলে এমন খাতগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানো যায়।”
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক সুবিধা, সুশাসন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নির্ভর সমাজ গঠনের লক্ষ্যই এবারের বাজেটের কেন্দ্রবিন্দু।
সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এই বাজেটকে সময়োপযোগী ও বাস্তবমুখী মনে করছেন অর্থ বিশ্লেষকরা। অনেকেই বলছেন, এই বাজেট ভবিষ্যতের জন্য একটি নীতি পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে যেখানে কেবলমাত্র প্রবৃদ্ধি নয় বরং মানুষের বাস্তব চাহিদাকে প্রধান গুরুত্ব দেয়া হবে।
দেশজুড়ে এই বাজেট নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। একদিকে বাজেটের সীমিততা ও ব্যয় সংকোচন নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিলেও অন্যদিকে মানবিক উন্নয়নের প্রতি সরকারের স্পষ্ট অবস্থান অনেককেই আশাবাদী করেছে।