স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘মাস্টারকার্ড’ ইলেকট্রনিক্সের একটি বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও সমাধান জালিয়াতি করে তাদের নিজেদের চাকরি হয়েছিল। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানে চাকরি থাকলেও তারা পরীক্ষায় জালিয়াতি করে অর্থ কামানোর মিশন নিয়ে নেমেছিল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সমাধান করে দেয়ার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা কামিয়েছে এই চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে জালিয়াত চক্রটি এবার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় তাদের কার্যক্রম না চালালেও পরিকল্পনা ছিল আগামীতে অন্য কোনো পরীক্ষায় সুযোগ নেয়ার। তবে সেই সুযোগ আর তারা পায়নি। তার আগে এই চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত শুক্রবার ডিবি রাজধানীর মিরপুর, নিউমার্কেট ও ফার্মগেট এলাকা থেকে এই চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন হবিগঞ্জ পূবালী ব্যাংকের শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম ওরফে সুমন, পটুয়াখালীর সোনালী ব্যাংকের আইটি অফিসার অসীম কুমার দাস ও কৃষি ব্যাংকের শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা মোঃ সোহেল আকন্দ। এছাড়াও আছে মোঃ জহিরুল ইসলাম, সাদ্দাতুর রহমান ওরফে সোহান, মোঃ নাদিমুল ইসলাম, মোঃ এনামুল হক ওরফে শিশির, শেখ তারিকুজ্জামান, অর্ণব চক্রবর্তী ও মোঃ আরিফুর রহমান। তাদের মধ্যে কেউ প্রকৌশলী, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা আবার কেউ কেউ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। গতকাল শনিবার মিন্টু রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন। সংবাদ সম্মেলনে বাতেন বলেন, বিশেষ ডিভাইসে জালিয়াতি চক্রের মূল হোতা হলেন পুলকেশ দাস ওরফে বাচ্চু। সে কখনো নিজেকে ব্যাংকের কর্মকর্তা আবার কখনো উপজেলা নির্বাচন অফিসার হিসেবে পরিচয় দেয়। আর তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক আবু জাফর মজুমদার রুবেল। তারা এই বিশেষ ডিভাইসগুলো সংগ্রহ করে। এই ডিভাইসগুলোর মূলত দুইটা অংশ থাকে। একটি পরীক্ষার্থীর কানের মধ্যে থাকে। মূলত কানে শুনার জন্য এই ডিভাইস কাজ করে। আবার আরেকটি মোবাইল সিম সংবলিত ডিভাইস তার শরীরে তাকে। তবে এই ডিভাইস দিয়ে কাউকে কল করা যাবে না। শুধু রিসিভ ও শুনা যাবে। বাতেন বলেন, এই চক্রটির একেকজন একেক ধরনের কাজ করে। পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও তাদের সঙ্গে চুক্তি করে ডিভাইস বিক্রি করা হয়। প্রশ্নপত্র সংগ্রহ ও তার সমাধান ও কন্ট্রোল রুম থেকে প্রশ্নের সমাধান পরীক্ষার্থীর কাছে পাঠানো হয়। রাজধানীর পান্থপথের একটি ভবনে তাদের কন্ট্রোল রুম রয়েছে। আগে থেকে পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও চুক্তির কাজ সেরে নেয়া হয়। প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে এজন্য নেয়া হয় ৩৫-৪০ হাজার টাকা থেকে ১০-১২ লাখ টাকা। পরীক্ষায় প্রবেশের পূর্বে পরীক্ষার্থীরা তাদের শরীরের কোথাও স্কসটেপ দিয়ে একটি ডিভাইস আটকে দেয়। আর আরেকটি ডিভাইস কানের মধ্যে লাগিয়ে দেয়। বাতেন আরো বলেন, পরীক্ষার সময় তাদেরই নিজস্ব একজন লোককে পরিকল্পনা মাফিক পরীক্ষার জন্য হলে পাঠানো হয়। সে ওই সময় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রশ্ন নিয়ে বাইরে চলে আসে এবং প্রশ্নটি সঙ্গে সঙ্গে তাদের জালিয়াতি চক্রের কন্ট্রোল রুমে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে আগে থেকে বিভাগওয়াইজ প্রশ্নের সমাধানের জন্য কিছু অভিজ্ঞ লোক থাকে। প্রশ্নপত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা সমাধান করে দেয়। পরে পরীক্ষার্থীদের এসব সমাধান পাঠিয়ে দেয়া হয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মশিউর বলেন, তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করতো। আর ছুটির দিনে সবাই একসঙ্গে মিলিত হয়ে কাজ করে। তিনি বলেন, তারা সামনের আরো বেশকিছু পরীক্ষা নিয়ে তাদের এই মাস্টার কার্ড ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতির ছক কষেছিল। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করে অনেক টাকাও কামিয়েছে। এই চক্রের মূলহোতা পুলকেশ ও আবু জাফর মজুমদার রুবেলকে আটকের চেষ্টা চলছে। তাদের আটক করতে পারলে বিস্তারিত জানা যাবে।